Wednesday, July 25, 2018

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ১০টি সহজ উপায়

আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়া এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া। আর তা যদি করতে হয় তাহলে জেনে নেয়া ভাল যে জান্নাতে যাওয়ার পথ ফুল বিছানো পথ নয়। সে পথে চলতে গেলে আমাদের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। সহিহ হাদিসে এসেছে যে জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে কামনা বাসনা দ্বারা। অর্থাৎ মানুষের যা করতে ভাল লাগে তা দিয়ে জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে। আর জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে দুঃখ-কষ্ট ও ধৈর্য দ্বারা।
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার অনেক উপায় রয়েছে তার মধ্যে এখানে বর্তমানে বাস্তবতার ভিত্তিতে ১০টি সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
১.গুনাহের সম্ভব্য রাস্তা বন্ধ করাঃ গুনাহ যাতে না হয় সে জন্য গুনাহের উপায় গুলো বন্ধ করে ফেলতে হবে। গুনাহর সামনে যখন একজন মানুষ দাঁড়ায় তখন গুনাহ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এর চেয়ে সহজ হচ্ছে সেই গুনাহের যাতে কাছে না যেতে হয় সেই ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে কোন কিছুর প্রতি যদি কারও আকর্ষণ থাকে তাহলে সেটা যদি সামনে এসে যায় তাহলে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া কঠিন। এর চেয়ে এর মুখোমুখি যাতে না হতে হয় সে ব্যবস্থা করা ভাল। সোজা কথায় খাল কেটে যেন আমরা কুমির না আনি। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন “মুমিনদেরকে বল তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।” এখানে আল্লাহ তাআলা প্রথমে দৃষ্টি অবনত রাখতে বলেছেন। তার কারন হচ্ছে দৃষ্টি অবনত রাখতে পারলে লজ্জাস্থানের হেফাজত অনেক সহজ হয়ে যায়।
বাস্তব একটি কেস নিয়ে আলোচনা করি। ইন্টারনেট বর্তমানে অনেক ফিতনার রাস্তা খুলে দিয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেটবিহীন জীবন আবার অবাস্তব সাজেশন। তাহলে কি করতে পারি? যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে।
–   যদি খুব দরকার না হয় তাহলে লো স্পিড নেট ব্যবহার করা।
–   বিভিন্ন অ্যাপ্স আছে যা অশ্লীল ছবি/বিজ্ঞাপন ফিল্টার করে তা ব্যবহার করা।
–   একা একা রুমে বসে নেট ব্রাউজ না করা।
২. দৈনন্দিন রুটিন ঠিক করাঃ আমদের ডেইলি রুটিন সম্পূর্ণ অনৈসলামিক। আমরা দিন শুরু করি দেরিতে আর রাতে জেগে থাকি। এটা মহাবিপদ। রাত জেগে থেকে সকালে দেরি করা ঘুম থেকে উঠার ফলে আমাদের দিনের পর দিন ফজরের সালাত মিস হচ্ছে। স্টুডেন্ট লাইফে এটা আরও বড় সমস্যা। আমরা যদি সাহাবীদের লাইফ স্টাইল দেখি তাহলে দেখব যে তারা সকল কাজ দিনেই সম্পন্ন করতেন। রাসূল (স) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন যে তার উম্মাতকে যেন সকালের প্রথম ভাগে বরকত দেয়া হয়। এবং আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেছিলেন। অনেক সময় মনে হতে পারে যে রাতে তো আমার পড়া ভাল হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভোরে পড়লে পড়া ভাল হয়। আরেকটি জিনিস হচ্ছে রাতের বেলা ফিতনার সুযোগ অনেক বেশি। তাই আমরা চেষ্টা করব যেন রাতের বেলা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরে উঠার চেষ্টা করা। ২/৩ দিন চেষ্টা করলেই ইনশাআল্লাহ তা অভ্যাসে পরিণত হবে।
৩. নিয়মিত কুরআন চর্চা করাঃ প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করা ও কুরআনের পিছনে সময় ব্যয় করা উচিত। তাহলে এই কুরআনই আমাদের গুনাহ থেকে টেনে তুলবে।
৪. সালাতকে সুন্দর করাঃ আমাদের চেষ্টা করতে হবে সালাতকে সুন্দর করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন যে “নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে মন্দ ও অশ্লীল কাজ হতে দূরে রাখে।”
৫. আল্লাহর সাহায্য চাওয়াঃ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। আল্লাহ যদি সাহায্য করেন তাহলে তা সোজা হয়ে যায়। এইজন্য ইউসুফ (আ) কে যখন সেই সুন্দরী উচ্চ বংশীয় মহিলা খারাপ কাজের জন্য আহ্বান করল তখন তিনি একজন নবী ও দৃঢ় চরিত্রের হওয়া সত্ত্বেও সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন।
৬. গুনাহ ও গুনাহের কুফল সম্পর্কে জানাঃ আমাদেরকে জানতে হবে কোন কোন কাজ গুনাহ। আজকে মানুষ জানেই না কোন কাজ গুনাহ। এছাড়া আমাদের গুনাহের কুফল সম্পর্কেও জানতে হবে। তাহলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। গুনাহের কুফল অনেক। যেমনঃ হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হওয়া, জ্ঞান কমে যাওয়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, আল্লাহর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়, জীবন জটিল হয়ে পড়ে ইত্যাদি।
৭. বিকল্প ব্যবস্থা করাঃ হারাম বিনোদন বাদ দিয়ে আমরা হালাল বিনোদন যেমন বিভিন্ন হালাল খেলাধূলা করা যেতে পারে। যারা মুভি দেখেন তারা বিভিন্ন ডকুমেন্টরি দেখতে পারেন। এভাবে হারামের হালাল বিকল্প খুঁজতে হবে।
৮. দৈনন্দিন জিকর করাঃ দৈনন্দিন বিভিন্ন জিকর রয়েছে যেগুলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। যেমন খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে বলা “বিস্মিল্লাহি তাওাক্কালতু আলাল্লাহি লা হাওলা কুও্বাতা ইল্লা বিল্লাহ।” এভাবে সব কাজের আগে দোয়া রয়েছে যেগুলো চর্চা করলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।
৯. কথা বলা, খাওয়া, মেলামেশা করা এগুলোর পরিমাণ কমানঃ কথা কম বলা কষ্টকর। কিন্তু যে বেশি কথা বলে তার গুনাহ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাসূল (স) বলেছেন যে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে সে হয় ভাল কথা বলুক নাহয় চুপ থাকুক। কারন কথা বলতে বলতে এমন গুনাহ হয়ে যেতে পারে যার শাস্তি খুব সাংঘাতিক। এছাড়া অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত না হওয়া। এছাড়া বেশি না ঘুমান ও বেশি না খাওয়া। অর্থাৎ হালাল কাজ গুলোর মধ্যেও সীমারেখা টানা।
১০. ধৈর্য ধারণ করাঃ আমাদের ধৈর্যের খুব অভাব। কিন্তু গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। ধৈর্য আসবে চেষ্টা করার মাধ্যমে। একজন লোক হয়ত আপনার পায়ে পাড়া দিয়ে চলে গেল আপনি চেষ্টা করুন তাকে কিছু না বলতে। আর ধৈর্য আয়ত্ত করার সবচেয়ে বড় সুযোগ হল রামাদান মাস।
(সংগৃহীত)

বাংলা উইকিপিডিয়ার মতে পর্নোগ্রাফি

বাংলা উইকিপিডিয়ার মতে পর্নোগ্রাফি

পর্নোগ্রাফি (সংক্ষেপে “পর্ন” বা “পর্নো” অনানুষ্ঠানিক ব্যবহারে) (ইংরেজি: Pornography) যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যৌনসংক্রান্ত বিষয়বস্তুর প্রতিকৃতি অঙ্কন বা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা। পর্নোগ্রাফি শব্দটি গ্রিক শব্দ “পরনোগ্রাফিয়া” থেকে নেওয়া হয়েছে। পর্নোগ্রাফি বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে উপস্থাপন করা হতে পারে, এর মধ্যে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে, বই, সাময়িকী, পোস্টকার্ড, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, অঙ্কন, পেইন্টিং, অ্যানিমেশন, সাউন্ড রেকর্ডিং, চলচ্চিত্র, ভিডিও এবং ভিডিও গেম।

বাংলাদেশের আইনে পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা

যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য-চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, অঙ্কিত চিত্রাবলি, বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য বিষয় — যার কোনো শৈল্পিক মূল্য নেই – তা পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচিত হবে। অধিকন্তু, যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, পত্র-পত্রিকা, ভাস্কর্য, কল্প-মূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা প্রচারপত্র পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচিত হবে। এসবের নিগেটিভ বা সফট ভার্শনও পর্নোগ্রাফি হিসেবে গণ্য হবে।

বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত কারা?

বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি ব্যবহারকারী কারা, তা নির্ধারণের তেমন কোনো চেষ্টা এখনো হয়নি৷ তবে স্কুল ছাত্রদের নিয়ে একটি জরিপ করেছে বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’৷ দেখা গেছে, ঢাকার স্কুল পড়ুয়াদের প্রায় ৭৭ ভাগ পর্নোগ্রাফি দেখে৷ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন একটি পত্রিকাকে জানান, “আমাদের এই জরিপটি অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে করা হয়৷ আর তাতে দেখা যায়, পর্নোগ্রাফি তারা ছবি, ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট আকারে ব্যবহার করে৷ এসব পর্নোগ্রাফির আবার বড় অংশই দেশে তৈরি৷ এই শিক্ষার্থীরা প্রধাণত মোবাইল ফোনে অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখে৷ এর বাইরে ট্যাব, ল্যাপটপেও তারা দেখে৷ আবার পেনড্রাইভ ব্যবহার করে বিনিময়ও করে৷”
বাংলাদেশে সাধারণভাবে পর্নোগ্রাফির ব্যবহার কেমন বা কারা এর ভোক্তা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট জরিপ নেই৷ জরিপের ফলোআপে দেখা যায়, ৩০-৩৫ বছর যাদের বয়স এবং তাদের মধ্যে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের শতভাগই একবার হলেও পর্নোগ্রাফি দেখেছেন৷ নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখেন ৯০ ভাগ৷ আর যুবনারীদের মধ্যে সংখ্যাটা শতকরা ৫০ ভাগ৷”
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপে আরো কিছু তথ্য উঠে এসেছে৷ তার মধ্যে বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে পর্নোগ্রাফির প্রবণতা বাড়ছে৷
এই পর্নোগ্রাফি প্রতিরোধে বাংলাদেশে আইন নেই ব্যাপারটা এমন না, আইন ঠিকই আছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আইন থাকা সত্ত্বেও এই প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু তা না হয়ে বরং তা বাড়ছে ভয়ানক গতিতে। যদিও বিটিআরসি ৫৬০টি পর্ন সাইট বন্ধ করেছে, কিন্তু পর্নোগ্রাফির জগত তো আর এই (৫৬০ টি সাইট) গণ্ডিতে থাকে না। তার আছে যে এক বিশাল ফিল্ড! আর বাংলাদেশের ছেলেপেলে কি কম মেধাবী? তাদের ভালো করেই জানা আছে কীভাবে ওই বন্ধ সাইটে প্রবেশ করতে হয় ভিপিএন দিয়ে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল মামুন (১১ অক্টোবর ২০১৭ একটি পত্রিকায়) বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনটি সুনির্দিষ্ট একটি আইন। এ আইনের অধীনে একটি-দুটি মামলায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়ার নজির থাকলে অপরাধীরা ভয় পেত।
এই তো গেলো আমাদের সোনার দেশে পর্নোগ্রাফির চিত্র। আপনি যদি আপনার ছোট ভাই বা বোন কিংবা ভাগিনা, ভাতিজা, ভাতিজিকে সতর্ক না করেন, কী জানি উপরের পরিসংখ্যানে পড়ে যেতে পারে আপনার প্রিয়জনও। তা আমরা নিশ্চয়ই চাই না। কী বলেন? তাই এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের। ছেলে, মেয়ে সহ পরিবারের ছোটদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। তারা যেন সারাদিন মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপে পড়ে না থাকে, সেদিকেও আপনার নজর দিতে হবে। আর হ্যাঁ, আপনাকে একটি তথ্য দেই। আপনি এখন (বাংলাদেশে) যদি কম্পিউটারের সামনে থাকেন, তাহলে গুগলে জাস্ট “চ” লিখে দেখেন সার্চ দেওয়ার দরকার নেই। দেখেন গুগল আপনাকে কী সাজেস্ট করে। আর এই সাজেস্ট গুগল কেন করে জানেন? কারণ গুগল সেই জিনিসই বেশি দেখায়, যেটা তার কাছে বেশি হিট বা রিকোয়েস্ট আসে। আর এই রিকোয়েস্টগুলো আমাদের বাংলাদেশের ছেলেপেলেরাই করছে। কত ভয়ানক তাই না! কিন্তু এই “চ” যদি আপনি সাউথ কোরিয়া থেকে লিখেন, সেখানে কিন্তু এই আজেবাজে সাজেস্ট গুগল করবে না যা আপনাকে বাংলাদেশে করেছিলো। কারণ গুগল একটি নির্দিষ্ট system এ সার্চ করে। এই নিয়ে বেশি কথা বললে আর্টিকেল বড় হয়ে যাবে, তাই এখানেই থামছি। আর তাদের (পরিবারের) সাথে সময় দিতে হবে। এর প্রতিকার নিয়ে সামনে আরো কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এখন চলুন, আপনাকে কিছু পর্নোগ্রাফির পরিসংখ্যান ও বিভিন্ন দেশের এই নিকৃষ্ট (পর্নোগ্রাফি) জিনিসের চিত্র তুলে ধরে দেখাই।

পর্নোগ্রাফির পরিসংখ্যান

প্রতি ১ সেকেন্ডে এই ভয়ানক জগতে যা যা হয়, তার অতি সংক্ষিপ্ত লিস্ট
■ 3,075.64 ডলার ব্যয় করা হয়। যা বাংলা টাকায় দাঁড়ায় ২৪৯,৬৭৪ টাকা। কী? অবাক হচ্ছেন? পর্নোগ্রাফির জগতে এইগুলো পানিভাত। এটা তো মাত্র ১ সেকেন্ডের হিসাব। ১ দিনের টাকার পরিমাণ কত হবে ভাবতে পারেন! হিসাবটা নিজেই করে দেখুন।
■ ২৮,২৫৮ জন মানুষ পর্ন দেখে।
■ ৩৭২ জন মানুষ যে word টি search engine এ সার্চ করে সেটি হলো “adult”
এ তো গেলো সেকেন্ডের কথা। এখন মিনিটের কথা তুলে ধরছি।
■ প্রতি ৩৯ মিনিটে ১টি পর্নোগ্রাফিক ভিডিও তৈরি করে আমেরিকা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। আমেরিকা।
এবার চলুন দেখে আসি ভার্চুয়াল জগত তথা ইন্টারনেটে এই পর্নোগ্রাফি যা মানব চরিত্র কলুষিত করছে তার অবস্থান।
■ আপনি কি জানেন ইন্টারনেটের জগতে পর্ন সাইট কয়টি আছে? না, না! কয়টি বললে ভুল হবে। কত লাখ আছে? জেনে অবাক হবেন ৪.২ মিলিয়ন, মানে ৪২ লাখ! যার মানে ইন্টারনেটের মোট সাইটের ১২%। সাংঘাতিক ব্যাপার, তাই না?
■ ৬৮ মিলিয়ন, মানে ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দৈনিক সার্চ ইঞ্জিনে রিকোয়েস্ট পাঠায় (মানে পর্ন দেখতে চায়) যা মোট রিকোয়েস্টের ২৫%।
■ প্রতি মাসে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট ডাউনলোড করা হয় তার পরিমাণ ১.৫ বিলিয়ন। আর জানেন তো ১ বিলিয়ন মানে ১ এর পর ৯টা শূন্য। যা টোটাল ডাউনলোডের ৩৫%
■ ৪২.৭% ইন্টারনেট ইউজার পর্নোগ্রাফি দেখে। যা টোটাল ইউজারের অর্ধেকের কাছাকাছি।
এবার চলুন দেখি আসি এর থেকে কোন কোন দেশ কী পরিমাণ রাজস্ব আয় করে।
■ আমেরিকা আয় করে ১৩.৩৩ বিলিয়ন ডলার! যা দিয়ে পৃথিবীর ৩০% মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব।
■ জাপান আয় করে ১৯.৯৮ বিলিয়ন ডলার! যা দিয়ে পৃথিবীর ৪২% মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব।
■ সাউথ কোরিয়া আয় করে ২৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার! যা দিয়ে পৃথিবীর ৫৮% মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব।
■ চায়না আয় করে ২৭.৪০ বিলিয়ন ডলার! যা দিয়ে পৃথিবীর ৬৮% মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব।
উপরের পরিসংখ্যান দেখে এখন আপনি হয়তো ভাবছেন আরেহ! পুরো ইন্টারনেট জগত কি পর্নোগ্রাফিতে তলিয়ে যাবে? না, এখনও পুরোটা তলিয়ে যায়নি। তবে অর্ধেকের থেকে একটু কম কিন্তু already তলিয়ে গেছে। তারপরও কি আপনি মুখ বুজে বসে থাকবেন? যদি তা-ই হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আপনার কাছের আপনজন যে এই স্রোতে ভেসে যাবে না তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে? ভাবুন, আপনিও ভাবুন নিজের ঘর থেকে পুরো সমাজকে কীভাবে এর থেকে মুক্ত করা যায়। আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন। পুরো সমাজ না পারলেও নিজের ঘরকে তো মুক্ত রাখতে পারলেন। এতেই বা আনন্দ কম কীসের। কে জানে আপনার দেখাদেখি অন্যরাও সংশোধন হয়ে যেতে পারে। ওহ, আর একটি কথা বলতে ভুলেই গেছি। উপরের যে পরিসংখ্যান দেখেছেন, তা কিন্তু ২০০৬ সালের। এবার আরো একটু ভাবুন ২০১৮-তে এর অবস্থান কমেছে নাকি ভয়ানক গতিতে বেড়েছে, সে প্রশ্নটা আপনার সুস্থ বিবেকের কাছে রইলো।

পর্ন দেখলে যেসব ক্ষতি হয়

১. অতিরিক্ত পর্নের নেশা ড্রাগের চেয়েও মারাত্মক। পর্ন ড্রাগ, মদ বা সিগারেটের মতোই আসক্তি তৈরি করে। পর্ন দেখলে মস্তিষ্কে একটা ‘ফিল গুড’ রাসায়নিক তৈরি হয়। এর নাম ডোপামিন। একটানা পর্ন দেখলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন সামান্য ডোপামিনের ক্ষরণে উত্তেজনা তৈরি হয় না। আরও বেশি ডোপামিনের জন্য মস্তিষ্ক আরও বেশি পর্নের রসদ খোঁজে এবং আসক্তি বাড়িয়ে তোলে।
২. অতিরিক্ত পর্নের আসক্তি সম্পর্কের ক্ষতি করে। যত বেশি পর্ন দেখবেন, ততই আপনি একটা অলীক ফ্যান্টাসির জগতে চলে যাবেন। এর ফলে বাস্তবের সম্পর্কগুলো আর আপনাকে সুখ দিতে পারবে না, যা সম্পর্কের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।
৩. অতিরিক্ত পর্ন মানসিক রোগের জন্ম দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্ন দেখা হয় একা, সমাজের চোখ এড়িয়ে। এর ফলে ধীরে ধীরে একটা অপরাধ বোধ জন্ম নেয়। যা থেকে ভবিষ্যতে মানসিক রোগ হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত পর্ন আপনার মনে ভাবনার সাম্যতা নষ্ট করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্ন তারকারা মেক আপ, ফটোশপ এবং কসমেটিক সার্জারির সাহায্য নেন। বেশি পর্ন দেখলে আপনি মানসিকভাবে বাইরের মানুষদের মধ্যে সেই তারকাদের খুঁজে পেতে চেষ্টা করবেন।
৫. অতিরিক্ত পর্ন আপনার স্বাভাবিক যৌনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। অতিরিক্ত পর্ন আপনার সঙ্গীর প্রতি আসক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে নষ্ট হয় স্বাভাবিক যৌনজীবন।
৬. পর্ন দেখা লোকজনের ইরেক্টাইল ডিসফাংশান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অতিরিক্ত পর্ন মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এই রোগের সৃষ্টি করে।
৭. পর্ন নারী পাচারের প্রবণতা বাড়ায়। পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যারা যুক্ত, তাদের অনেকে স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিলেও নতুন মুখের চাহিদা এখানে প্রবল। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগান বাড়াতে গিয়ে বাড়ে নারী পাচারের সংখ্যা।
৮. পর্ন মানুষকে বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে। দেখা গেছে, একেবারে সাদামাটা পর্নও অতিরিক্ত দেখলে তা দর্শকের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। এছাড়াও মানুষকে অতি আক্রমণাত্মক, বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে।

পর্নোগ্রাফি তথা অশ্লীলতার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

আল্লাহ্‌ তা’আলা অশ্লীলতা সম্পর্কে কুরআনে বলেন,
আপনি বলে দিন, আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য……। [সূরাহ আল-আ’রাফ (৭) : ৩৩]
যারা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে দুনিয়া ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি; আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। [সূরাহ আন-নূর (২৪): ১৯]
আর তোমরা যিনার (অবৈধ যৌনকর্মের) কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ। [সূরাহ আল-ইসরা (১৭): ৩২]
হে মুমিনগণ, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না আর যে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন সে (শয়তান) নির্লজ্জতার ও মন্দ কাজের আদেশ করবে। [সূরাহ আন-নূর (২৪): ২১]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। … [সূরাহ আন-নূর (২৪): ৩০-৩১]
নিশ্চয়ই কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটি সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হবে। [সূরাহ আল-ইসরা (১৭): ৩৬]
চার দেয়ালের মধ্যে একা রুমে আপনি আর কেউ নেই। কেউ দেখছে না আপনাকে। ব্যস, অমনি চান্স পেয়ে আপনি চলে গেলেন পর্নসাইটে। ডেপ ডেপ করে গিলছেন সেই অসভ্য কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য। কিন্তু আপনার এই ভাবনাটা ভুল। আপনাকে দুনিয়ার আর কেউ না দেখুক, কিন্তু আল্লাহ্‌ আপনাকে ঠিকই দেখছেন। আর আপনি কি না বেমালুম তার কথা ভুলে গেলেন। কত অকৃতজ্ঞ বান্দা আপনি, একবার কি ভেবেছেন? ঠিক সেই সময় যদি আপনার মৃত্যু চলে আসে আর স্ক্রীন চলতে থাকে আর আপনার আপনজন যদি এসে আবিস্কার করে যে আপনি কি না এমন যাকে সবাই ভদ্র ও সভ্য মনে করতো! সেই ভদ্র ও সভ্যের মুখোশের আড়ালে আপনি ছিলেন নিরেট ভণ্ড। আর আপনি এও ভুলে গেলেন যে কান, চোখ, ও অন্তর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, অর্থাৎ হিসাব নেওয়া হবে। পারবেন কি সেই হিসাব দিতে?

প্রতিকার

১। ইসলামে আছে অশ্লীলতাসহ সব ধরনের পাপাচারের পার্মানেন্ট সলুউশান। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর। তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য রাস্তা তালাশ কর এবং তাঁর রাস্তায় জিহাদ কর। যাতে এ সবকিছুর ফলে তোমাদের সফলতা অর্জিত হয় দুনিয়াতেও, আখিরাতেও। [সূরাহ আল-মায়িদা (৫) : ৩৫]
তাকওয়া (আল্লাহ্‌র ভয়) এক অতন্দ্র প্রহরি। কোনো এলাকায় আইন-কানুনের পাবন্দি থাকলেও দেখা যায়, তা কেবল পুলিশের ডাণ্ডা ও আদালতি ঝামেলার ভয় থাকা পর্যন্তই। এরপর আর কেউ নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করে না। কিন্তু একান্ত নির্জনতায় এবং নিশুতি রাতের অন্ধকারেও যে জিনিস মানুষের অন্তরে অতন্দ্র প্রহরীর কাজ করে তা হল আল্লাহ তাআলার ভয়।
২। পরনারী থেকে দৃষ্টি নিচু করতে হবে। হারাম রিলেশান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
৩। যেসব জিনিস পর্ন দেখার উৎসাহ জোগায়, সেসব থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন, গান-বাজনা, মুভি ও বাজে বন্ধু।
৪। উস্তাদ মাজেদ মাহমুদ বলেন, পর্ন দেখার জন্য তিনটা জিনিসের প্রয়োজন
■ চিন্তা (যে আজ আমি পর্ন দেখবো)
■ ডিভাইস (মোবাইল, ল্যাপ্টপ, ট্যাব ইত্যাদি পর্ন দেখার জন্য)
■ জায়গা (কোনো খালি একটি রুম বা ঘর)
এই তিনটি জিনিস থেকে যেকোনো একটি জিনিস বাদ দিন। দেখবেন পর্ন আর দেখা হবে না।
৩। মাসজিদে নিয়মিত সালাত পড়ুন।
নিশ্চয় সালাত সকল অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে … । [সূরাহ আনকাবুত (২৯): ৪৫]
৪। মাঝে মাঝে সওম রাখার অভ্যাস করুন। ইনশা আল্লাহ এর দ্বারা আপনার পর্ন আসক্তি দূর হয়ে যাবে।
৫। কিছু সময় যিকির করুন। আর খুব দু’আ করুন। বেশি বেশি তাওবাহ করুন।
৬। যদি এতকিছুর পরও আবারও সেই নেশায় পেয়ে যায়, তাহলে নিজেকে শাস্তি দিন। যেমন, আমি যদি আর পর্ন দেখি তাহলে ১০০০ টাকা দান করবো বা ১০ রাকাত বেশি নফল সালাত পড়বো। ইনশা আল্লাহ এই কাজগুলো করতে পারলে এই পর্ন নামক জিনিস থেকে আপনি বের হয়ে আসতে পারবেন।

আপনিও পারবেন 

অনেকে বলে থাকেন যে, অনেক অনেক চেষ্টা করার পরও পর্ন দেখার অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না। আমি বলি এটা একটা অজুহাত মাত্র। কেন বলছি জানেন? আপনি তো শুধু পর্ন watcher (মানে শুধু দেখেন)। একবার চিন্তা করুন performer এর কথা, যাকে ঘিরে এই পর্ন ভিডিও তৈরি করা হয়। যদি সে পারে এই অসভ্য কাজ থেকে চলে আসতে, তাহলে আপনি কেন শুধু দেখা বন্ধ করতে পারবেন না? তেমনই এক porn performer ব্যক্তি তাঁর সময়ে সে ছিলেন most successful male porn performer. তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন কেন তিনি এই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি একটি উক্তি করেন, যা আমি তুলে  ধরছি।
“If I can change my heart, (এতটুকু বলে তিনি মুচকি হাসি দেন) anybody can.”

অভিভাবকদের জন্য কিছু পরামর্শ

১। পরিবারের সদস্যের প্রতি যত্নবান হোন।
২। কোনো সদস্য একাকিত্ব বা হতাশায় ভুগে কি না সে ব্যাপারে লক্ষ রাখুন।
৩। পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ কায়েম করুন।
৪। কম্পিউটারে parental control software ইন্সটল করে দিন। এক্ষেত্রে k9 web protection software টি use করতে পারেন।
পর্নের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরো জানতে এবং এর থেকে বাঁচার আরো উপায় জানতে এই ভিডিওগুলো দেখুন
পর্নের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে এমন দুইটা বাংলা সাইট
https://stoppornographybd.blogspot.com/

তথ্যসূত্র
৬। দৈনিক আমাদের সময় (২১ এপ্রিল ২০১৬)

নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে ফেলছেন অসংখ্য পুরুষ

ডেস্ক রিপোর্ট : পর্নোগ্রাফি দেখার কুফল অনেক। নিয়মিত পর্নো ছবি দেখার মাধ্যমে নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করে ফেলছেন অসংখ্য পুরুষ।


প্রথমত, পর্নো আসক্ত পুরুষদের সাধারণত রুচিশীল নারীরা হীনম্মন্য ও চরিত্রহীন মনে করে। নারীরা যখন জানতে পারে তার পরিচিত কোনো পুরুষ নিয়মিত পর্নো ছবি দেখে, তখন তার সম্পর্কে খারাপ মনোভাব জন্ম নেয়। এবং তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।

দ্বিতীয়ত, রুচিবোধের অধঃপতন হয়। যারা নিয়মিত পর্নো সিনেমা দেখে তাদের রুচি বিকৃত হয়ে যায়। জীবনের স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোতেও নিজের অজান্তে বিকৃতি খোঁজে তাদের চোখ।

তৃতীয়ত, নিয়মিত পর্নো ছবি দেখতে দেখতে পুরুষরা বাস্তবতাকেই হারিয়ে ফেলে। বাস্তব জীবনেও তারা তেমন সঙ্গীই আশা করে। সাধারণ নারীদের তখন আর তাদের যথেষ্ট মনে হয় না। ফলে জীবনের সুখ-শান্তি হারিয়ে যায় তাদের।

পর্নো নায়িকাদের সৌন্দর্য কৃত্রিম, আচরণও কৃত্রিম। মেকআপ, লাইট ও ক্যামেরার কারসাজিতে তাদের মোহনীয়ভাবে দেখানো হয়, যা বাস্তব জীবনে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই পর্নো আসক্তরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিঃসঙ্গ থেকে যায় অথবা সংসারে অসুখী হয়।

চতুর্থত, নিয়মিত পর্নো ছবি যারা দেখে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে বিকৃত অভ্যাস, যার অতিরিক্ত প্রয়োগে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ে এবং যৌন জীবনে নানান সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

পঞ্চমত, এটি এক ভয়াল নেশা। পর্নো সিনেমার নেশা মাদকের নেশার মতোই ভয়ংকর। মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যেমন কষ্টসাধ্য, পর্নো আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়াও দুরূহ ব্যাপার। পর্নো আসক্তির কারণে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়, পড়াশোনায় ক্ষতি হয়, এমনকি নিজের মধ্যেও হীনম্মন্যতার সৃষ্টি হয়।

ষষ্ঠত, পর্নো আসক্তদের মোবাইল ফোনে, কম্পিউটারে, পেনড্রাইভে সবখানেই পর্নো ছবি থাকে। অনেক সময় এসব অনৈতিক বিষয় পরিবারের কাছে ধরা পড়ে যায়। ফলে পর্নো-আসক্ত ব্যক্তিকে হেয় হতে হয়। এ ছাড়া হারাতে হয় ভালো বন্ধু-সার্কেলকেও।

আপনি কি যখনই সুযোগ পান তখনই পর্ন দেখেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে বলা যায় পর্নের প্রতি আপনার আসক্তি তৈরি হয়েছে।


আপনি কি যখনই সুযোগ পান তখনই পর্ন দেখেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে বলা যায় পর্নের প্রতি আপনার আসক্তি তৈরি হয়েছে। আর এই আসক্তি থেকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি পেতে হবে আপনার। যদি এক দিনে না পারেন, তবে ধীরে ধীরে। কিন্তু বন্ধ করতেই হবে।
কারণ চিকিৎসকরা জানান, পর্নাসক্তি ড্রাগের নেশা থেকে কোনও অংশে কম নয়, তা স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে আপনার জীবনে।
জেনে নিন চিকিৎসকদের মতে যে ৮ কারণে আপনার এখনই পর্ন দেখা বন্ধ করা উচিত।
১. অতিরিক্ত পর্নের নেশা ড্রাগের চেয়েও মারাত্মক। পর্ন ড্রাগ, মদ বা সিগারেটের মতোই আসক্তি তৈরি করে। পর্ন দেখলে মস্তিস্কে একটা 'ফিল গুড' রাসায়নিক তৈরি হয়। এর নাম ডোপামিন। একটানা পর্ন দেখলে মস্তিস্কে ডোপামিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন সামান্য ডোপামিনের ক্ষরণে উত্তেজনা তৈরি হয় না। আরও বেশি ডোপামিনের জন্য মস্তিস্ক আরও বেশি পর্নের রসদ খোঁজে এবং আসক্তি বাড়িয়ে তোলে।
২. অতিরিক্ত পর্নের আসক্তি সম্পর্কের ক্ষতি করে। যত বেশি পর্ন দেখবেন, ততই আপনি একটা অলীক ফ্যান্টাসির জগতে চলে যাবেন। এর ফলে বস্তবের সম্পর্কগুলো আর আপনাকে সুখ দিতে পারবে না, যা সম্পর্কের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে।
৩. অতিরিক্ত পর্ন মানসিক রোগের জন্ম দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্ন দেখা হয় একা, সমাজের চোখ এড়িয়ে। এর ফলে ধীরে ধীরে একটা অপরাধ বোধ জন্ম নেয়। যা থেকে ভবিষ্যতে মানসিক রোগ হতে পারে।
৪. অতিরিক্ত পর্ন আপনার মনে ভাবনার সাম্যতা নষ্ট করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্ন তারকারা মেক আপ, ফোটোশপ এবং কসমেটিক সার্জারির সাহায্য নেন। বেশি পর্ন দেখলে আপনি মানসিক ভাবে বাইরের মানুষদের মধ্যে সেই তারকাদের খুঁজে পেতে চেষ্টা করবেন।
৫. অতিরিক্ত পর্ন আপনার স্বাভাবিক যৌনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। অতিরিক্ত পর্ন আপনার সঙ্গীর প্রতি আসক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে নষ্ট হয় স্বাভাবিক যৌনজীবন।
৬. পর্ন দেখা লোকজনের ইরেক্টাইল ডিসফাংশান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অতিরিক্ত পর্ন মস্তিস্কে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এই রোগের সৃষ্টি করে।
৭. পর্ন নারী পাচারের প্রবণতা বাড়ায়। পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যারা যুক্ত, তাদের অনেকে স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিলেও নতুন মুখের চাহিদা এখানে প্রবল।
চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগান বাড়াতে গিয়ে বাড়ে নারী পাচারের সংখ্যা।
৮. পর্ন আপনাকে বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে। দেখা গেছে, একেবারে সাদামাটা পর্নও অতিরিক্ত দেখলে তা আপনার মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। এছাড়াও আপনাকে অতি আক্রমণাত্মক, বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে

xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx


নিউজ ডেস্ক: পর্নোগ্রাফি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই যৌন উৎকল্পনার খোরাক যোগায়। তবে এক্স রেটেড ইমেজ ও ফিল্ম উৎকাল্পনিক ইন্দ্রিয় সুখ দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও অনেক ক্ষতি করে।মানসিক অবস্থার উপর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলতে সক্ষম হরমোন নিঃসরণের পাশাপাশি আসক্তিমূলক প্রবণতাও সৃষ্টি করতে পারে পর্ন। ফলে আমাদের মস্তিষ্কে পর্নোগ্রাফির মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবও পড়তে পারে।   আপনি যত বেশি পর্ন দেখবেন ততই মন চাইবে।  স্বাভাবিক যৌন সহবাস ও পর্ন মুভি দেখা উভয়ের মাধ্যমেই মস্তিষ্কে ডোপামিন নামের হরমোন নিঃসরিত হয়। এই হরমোনের প্রভাবেই আমাদের মস্তিষ্কে আনন্দের অনুভুতি বা ইন্দ্রিয় সুখানুভুতির সৃষ্টি হয়।কিন্তু নিয়মিত পর্ন দেখার ফলে স্বল্পবিরতিতে বারবার ডোপামিন নিঃসরণের ফলে মস্তিষ্ক এই হরমোনটির কার্যকারীতার প্রতি সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলতে পারে।   জেএমএ সাইকিয়াট্রি নামের জার্নালে ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দাবি করা হয়- নিয়িমিত পর্ণ মুভি দেখলে একটা সময়ে এসে যৌনতার প্রতি মস্তিষ্কের উদ্দীপনায় ঘাটতি নেমে আসতে পারে।তার মানে আগের মতো স্বাভাবিক মাত্রার যৌন উদ্দীপনা ধরে রাখতে হলে আরো বেশি হারে ডোপামিন নিঃসরণের দরকার পড়বে। এর জন্য আবার আরো বেশি বেশি পর্ন মুভি দেখার প্রয়োজন পড়বে। গবেষণায় এমনটাই প্রমাণ পেয়েছেন জার্মান বিশেষজ্ঞরা।  সাইকোলজি টুডে-তে প্রকাশিত ২০১১ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে অতিরিক্ত ডোপামিনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ার মানে হল যারা পর্ন মুভি দেখেন তাদের যৌন উত্তেজনা বা উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার জন্য উত্তোরত্তর চরম অভিজ্ঞতামূলক পরিস্থিতির প্রয়োজন পড়বে।পর্ন মুভিতে অমন অস্বাভাবিক যৌনাচরণ দেখার ফলে পুরুষরা ক্রমান্বয়ে যৌন সংবেদনশীলতা হারাতে থাকে এবং স্বাভাবিকভাবে যৌন উত্তেজনার সক্ষমতাও হারাতে থাকে।পর্নোগ্রাফি এমন একটি তরুণ প্রজন্ম সৃষ্টি করে যারা বেডরুমে হতাশায় ভোগে।  পর্ন মস্তিষ্ককে সংকুচিত করে  যারা নিয়মিত পর্ন মুভি দেখেন সম্ভবত তাদের মস্তিষ্ক সংকুচিত হয়ে আসতে থাকে। ওই জার্মান গবেষকরা এমনটাই আবিষ্কার করেছেন।মস্তিষ্কের যে অংশটুকুতে যৌন উদ্দীপনা ও ইন্দ্রিয় সুখানুভুতি সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত পর্ন মুভি দেখার ফলে সে অংশটুকেু ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসতে থাকে।ওই গবেষণায়ই সর্বপ্রথম গবেষকরা নিয়মিত পর্ন মুভি দেখার সঙ্গে শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। তবে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে যারা বেশি বেশি পর্ন মুভি দেখেন তারা হয়তো একটি বিশেষ ধরনের মস্তিষ্ক নিয়েই জন্মগ্রহণ করেন।  
পর্ন আসক্তদের মন ড্রাগ আসক্তদের মতোই 
২০১৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পর্ন আসক্তরা যখনই পর্ন মুভি দেখতে বসে তাদের মস্তিষ্কে স্ক্যান মেশিনের মতো আলো জ্বলে ওঠে।যেসব তরুণ অনলাইন পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত তারা উত্তেজক ছবি দেখামাত্রই তাদের মস্তিষ্কে ক্রিসমাস ট্রির মতো আলো জ্বলে ওঠে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটিই দেখা গেছে।মস্তিষ্কের যে অংশে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ইন্দ্রিয় সুখানুভুতি সৃষ্টি হয় সে অংশটি ড্রাগ আসক্ত ও পর্ন আসক্ত উভয়ের বেলায়ই সমান উচ্চহারে সক্রিয় থাকে। 
এর এক বছর পর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অল্প বয়স থেকেই পর্ন মুভি দেখায় অভ্যস্থ হয়ে পড়ে তাদের মস্তিষ্কের তিনটি অংশ যারা পর্নআসক্ত নয় তাদের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। সূত্র: ডেইলি মেইল 

পুরুষ তো বটেই, আজকাল মেয়েদেরও একটা অংশ নীল ছবি দেখে। গত বছর একটি সমীক্ষা থেকে এ কথা জানা গেছে। ফলে পর্ন ফিল্ম দেখা নিয়ে রাখঢাক করে লাভ নেই। বাস্তবটা মেনে নেওয়াই ভালো। তবে, এর কুফলও পড়তে শুরু করেছে। এবং সেটা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কী দেখে, কেন দেখে- এসব আলোচনা ছেড়ে সোজাসুজি একটা কথা বুঝে নেওয়া দরকার, উপমহাদেশে সেক্স-এডুকেশন বলে কিছু নেই। ভালোমন্দ বুঝে ওঠার আগেই অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা পর্ন ছবি দেখতে শুরু করছে। আর তার চেয়ে বড় চিন্তার বিষয়, দেখে দেখে সেটাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করছে। শুধু অনুকরণই নয়, অনেকে আবার ছবি তুলে সংগ্রহ করে রাখছে নিজের কাছে। ফল যে কত মারাত্মক হতে পারে, তা চিন্তা না করেই। পর্ন ছবি দেখার আরও কুফল আছে। সেগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
১. মন নয়, শুধুই শরীর
প্রেমের সম্পর্ক হারিয়ে যাচ্ছে। সবটাই শরীরসর্বস্ব হয়ে উঠছে। শরীরের চাহিদা মেটাতেই অপরের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে। ফলে ভেঙেও যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। বিয়ের পর, অনেক ক্ষেত্রেই যৌনতায় অতৃপ্তি তৈরি হচ্ছে। এবং শেষ পর্যন্ত ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত গড়াচ্ছে।
২. বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অশ্রদ্ধা
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষ (পড়ুন অশিক্ষিত পুরুষ) অশ্রদ্ধার চোখে দেখতে শুরু করছে মেয়েদের। ভাবছে নারী বোধহয় শুধুই ভোগ্যবস্তু। শুধু সহবাসের জন্য নারীর প্রয়োজন। সমাজে নারীর গুরুত্ব হারাচ্ছে। ফলে বাড়ছে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা। যে দেশে অশিক্ষিতের সংখ্যা বেশি, সেখানে এর কুফলই বেশি আসবে, তাতে সন্দেহ কী। কারণ ভালোমন্দ বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা এই অশিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে নেই। অথচ হাতে আছে সিডি, ডিভিডি, পেন-ড্রাইভ, ইন্টারনেট।
৩. সামাজিক মূল্যবোধ হারাচ্ছে
সৃষ্টিশীলতা, সৃজনশীলতা ধ্বংস হচ্ছে। সারাক্ষণই যৌনতা ঘুরছে অল্পবয়সী, না বুঝে ওঠা ছেলে মেয়েদের মধ্যে। বাঁধন হারাচ্ছে সবকিছুর। সামাজিক মূল্যবোধ হারাচ্ছে। নারী হলেই হলো। সম্পর্ক দেখছে না। ছাত্রী, পাড়ার বোন, ভাবি- বাদ যাচ্ছে না কিছুই। এমনকী রেহাই পাচ্ছে না ছোটো ছোটো শিশু। সবার দিকেই লোলুপ দৃষ্টি। সামাজিক অবনমন হয়েই চলেছে দিন কে দিন।
৪. অশ্রাব্য ভাষা ও ইঙ্গিত বাড়ছে
ছোটো ছোটো ছেলেরা পর্ন ছবি দেখে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। নারী দেখলেই অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে। ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলছে। লজ্জা, শঙ্কা, ভয়, ডর- কিছুই থাকছে না। মনে করছে পৃথিবীর সবই হাতের মুঠোয়। (পড়ুন, সবাই হাতের মুঠোয়।)
৫. পর্ন ছবির যৌনতাকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা
নীল ছবির রগরগে যৌনতাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করছে। কখনও সেটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভারতের নির্ভয়াকাণ্ডের মতো বীভৎস ঘটনার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।